রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন

শিক্ষার্থী পাওয়াই কঠিন নামসর্বস্ব কলেজে

শিক্ষার্থী পাওয়াই কঠিন নামসর্বস্ব কলেজে

স্বদেশ ডেস্ক:

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর যুদ্ধ শুরু হয় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে। পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য একরকম নির্ঘুম রাত কাটে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের। আছে উল্টো চিত্রও; অনেক কলেজ শিক্ষার্র্থীই পায় না। শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এবারও একই চিত্র দেখা যাবে। ভালো কলেজগুলোয় প্রতিযোগিতা যেমন বাড়বে, তেমনি অপেক্ষাকৃত মানহীন কলেজে অনেক আসন ফাঁকাই থাকবে।

একাদশ শ্রেণির ভর্তির আবেদন শুরু হবে ৮ জানুয়ারি। পুরো ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে অনলাইনে। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। একাদশ শ্রেণিতে আসন রয়েছে ২৪ লাখ ৪০ হাজার ২৪৯টি। সেই হিসাবে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭০৩টি আসন খালি থাকবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে বলেন, ‘কলেজ ভর্তিতে আসন সংকট হবে না। আমরা গতবারও দেখেছি অনেক আসন ফাঁকা ছিল। কাজেই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সবাই যে উচ্চ মাধ্যমিকে যায় তাও নয়, আমরা আশা করছি অনেকেই কারিগরিতে যাবেন, ডিপ্লোমা করবেন।’

বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসাব বলছে, সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮ হাজার ৮৬৪টি। এর মধ্যে ‘মানসম্মত’ কলেজের সংখ্যা পৌনে ২০০। এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। তাই সর্বোচ্চ ভালো ফল করা এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ওই সব কলেজে আসন পেতে লড়াই হবে। চাইলেও সবাই পছন্দের ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না।

ব্যানবেইসের হিসাবে, ঢাকা বিভাগে ৭০টি, রংপুর বিভাগে ২৯টি, বরিশাল বিভাগে ১২টি, রাজশাহী বিভাগে ৫টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, খুলনা বিভাগে ১১টি এবং সিলেট বিভাগে ২২টি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কলেজে নিজ নিজ বিভাগের জিপিএ-৫ ধারীরাও ভিড় করলে সবার ভর্তির সুযোগ হবে না। আবার রাজধানীতে মোট ১৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণি রয়েছে। এসব কলেজে আসন আছে ৪৩ হাজার ৫১৯টি। এর মধ্যে ভালো মানের কলেজ আছে মাত্র ২০ থেকে ২২টি, যেখানে আসন সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, নামসর্বস্ব কলেজগুলো নানাবিধ কৌশলে আগে শিক্ষার্থী ভর্তি নিত। এখন অনলাইন ভর্তি নেওয়ায় এ ধরনের কলেজগুলোয় আগ্রহ নেই শিক্ষার্থীদের।

শহরের অলি-গলিতে গড়ে ওঠা নামসর্বস্ব এসব কলেজের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই পাড়া-মহল্লায় অনুমোদন নিয়ে ঝুলানো হয়েছে একাধিক কলেজের সাইনবোর্ড।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, একে তো অনলাইন ভর্তি। আরেক হলো, এখন কেউ আর নাম দেখে কলেজে ভর্তি হয় না। কোনটির বিগত ফল কী, সেগুলো বিবেচনা নেয়। আরেকটি কারণ হলো, এখন বাসায়-বাসায় গিয়ে মার্কেংটিং করে কলেজগুলো শিক্ষার্থী টানতে পারছে না। অনলাইনে পছন্দের কলেজ বাছাই করছেন শিক্ষার্থীরা। একই মহল্লায় একাধিক কলেজ কেন থাকবে- এমন প্রশ্ন তুলে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘এখন টাকা হলেই একটি স্কুল-কলেজ খোলা যায়। ওটা প্রস্তাবিত এলাকায় দরকার আছে কি নেই, সেটা যাচাই করার চেয়ে দেখা হয় এটা কোন এমপি-মন্ত্রীর দাবি ইত্যাদি।’

এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার নামসর্বস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কঠোর। বিগত সময়ে ভর্তির জন্য যেসব কলেজে আবেদন পড়েনি, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সারাদেশে এমন অনেক কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। আসনের চেয়ে কম শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া প্রতিষ্ঠানের আসন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী কম ভর্তি হলে আসন কমিয়ে দেওয়া, বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত আমরা নেব।’

এদিকে ভর্তির নিয়মাবলি, কোটা, অন্য শর্তাবলি চূড়ান্ত করে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে গলাকাটা ফি আদায় বন্ধ করতে ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ঢাকা শহরে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ভর্তি ফি ৫ হাজার, অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় সর্বোচ্চ ৩ হাজার, জেলা সদর ও পৌর এলাকায় ২ হাজার, উপজেলা পর্যায়ের কলেজে ভর্তি ফি এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877